একসময় কোথাও কোনো অপরাধ হলে মানুষ তার প্রতিবাদ করত। কেউ প্রকাশ্যে কোনো অসামাজিক কাজে লিপ্ত হলে মানুষ তাকে সতর্ক করত। সামাজিকভাবে তা বন্ধ করার চেষ্টা করত। কিন্তু এখন এই প্রবণতা অনেক কমে গেছে। প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। কোনো গুনাহ দেখলে তাতে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, হিকমত অবলম্বন করে তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে বোঝার পর্যন্ত চেষ্টা করে না। অথচ মহান আল্লাহ প্রতিটি মুসলমানকে সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের দায়িত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির (সর্বাত্মক কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভূত করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করো ও আল্লাহর প্রতি ঈমান রক্ষা করে চলো। (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১১০) মানুষ যত দিন মহান আল্লাহর এই বাণী মেনে চলবে, তত দিন পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকবে, তাদের শ্রেষ্ঠত্বও বজায় থাকবে। কিন্তু মানুষ যদি তাদের দায়িত্ব থেকে সরে আসে, তবে তাদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসবে, এবং সমাজে এমন পাপাচার শুরু হবে, তাদের কাজকর্ম তাদের নিকৃষ্ট করে দেবে। সাহাবি হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎকাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগিরই তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর নিকট দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৯) এর কারণ হলো, বান্দার গুনাহের কারণে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসে। মহান আল্লাহর ক্রোধ বেড়ে যায়। যারা আল্লাহওয়ালা, তারা যদি আল্লাহভোলাদের দাওয়াত দিয়ে আল্লাহর পথে না আনতে পারে; বরং তাদের অপরাধ দেখে নীরব থাকে, তাহলে মহান আল্লাহর ক্রোধ সবাইকে গ্রাস করবে। দাওয়াত ছেড়ে দেওয়ার ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য মহানবী (সা.) একটি অনন্য উদাহরণ দিয়েছেন, দাওয়াতের গুরুত্ব বোঝার জন্য এই উদাহরণের কোনো তুলনা হয় না। নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমা লঙ্ঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মতো, যারা লটারির মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল ওপরতলায় আর কেউ নিচতলায় (পানির ব্যবস্থা ছিল ওপরতলায়) কাজেই নিচের তলার লোকেরা পানি সংগ্রহকালে ওপরতলার লোকদের ডিঙিয়ে যেত। তখন নিচতলার লোকেরা বলল, ওপরতলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নিই (তবে ভালো হয়) এ অবস্থায় তারা যদি এদের আপন মর্জির ওপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে (বিরত রাখে) তবে তারা এবং সবাই রক্ষা পাবে। (বুখারি, হাদিস : ২৪৯৩)
0 Comments
Your Comment