জ্ঞানগত পর্যালোচনা, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সাধারণ, শিক্ষিত, উদাসীন ও আলেমসহ মুসলিম সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির সঙ্গে মেশার ফলে আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে সব শ্রেণির মুসলমানের জন্য সত্যিকার ঈমানি শিক্ষা ও অনুশীলন অপরিহার্য, যা তাদের আল্লাহমুখী করবে এবং যার মাধ্যমে তাদের অন্তর পরিশুদ্ধ হবে দুনিয়ার মোহ ও আত্মপূজা থেকে। ঈমানি শিক্ষা ও ঈমানের অনুশীলন মানুষকে বস্তু, প্রবৃত্তি ও কল্পনার আনুগত্য থেকে মুক্তি দেয়। তা মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতে আবদ্ধ করে এবং পবিত্র রাখে বিশ্বাসকে শিরক থেকে, অন্তরকে কপটতা থেকে, জিহ্বাকে মিথ্যা থেকে, চোখকে খেয়ানত থেকে, কথাকে অর্থহীন বাক্যব্যয় থেকে, ইবাদতকে প্রদর্শন থেকে, লেনদেনকে প্রতারণা থেকে এবং জীবনকে দ্বন্দ্ব থেকে। আর এই পুরো বিষয়টিকে এককথায় বলা হয়, তাজকিয়াতুন নাফস বা আত্মশুদ্ধি। ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির জন্য মানুষের আত্মশুদ্ধি অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ মানুষের এবং তাঁর, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও তার সৎকর্মের জ্ঞান দান করিয়েছেন। সেই সফলকাম হবে, যে নিজেকে পবিত্র করবে এবং সেই ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।’ (সুরা : শামস, আয়াত : ৭-১০) আরবি তাজকিয়া শব্দটি জাকাত থেকে উদ্ভাবিত। অর্থ পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি। আত্মার পবিত্রতা হলো কপটতা ও পাপাচার থেকে মুক্তি লাভ। আর প্রবৃদ্ধি হলো ঈমান ও উত্তম গুণাবলিতে নিজেকে সুসজ্জিত করা। আধ্যাত্মিক সাধকদের ভাষায় তাকে ‘তাখাল্লিয়া’ ও ‘তাহাল্লিয়া’ বলা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আত্মশুদ্ধিকে কোরআন ও হিকমত শিক্ষাদানের মতো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৌলিক কাজ ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতগুলো তাদের কাছে তিলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৪)
0 Comments
Your Comment