ইতিকাফের প্রস্তুতি

ইতিকাফের পরিচয় ইতিকাফ শব্দটি আরবি। অভিধানে এর শাব্দিক অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে, অবস্থান করা, অভিমুখী হওয়া, নিবেদিত হওয়া, নিরবচ্ছিন্ন হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততাকে ত্যাগ করে, এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। বা যে স্থানকে নামাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিকাফের ফজিলত ও উপকার : ইতিকাফ একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। রমজানের ফজিলত ও বরকত লাভ করার ক্ষেত্রে ইতিকাফের ভূমিকা অপরিসীম। যথা- (১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদানি জীবনে কেবল একটি রমজানে তখন তিনি (জিহাদের সফরে থাকার কারণে) ইতিকাফ করতে পারেননি। তাই পরবর্তী বছর ২০ দিন ইতিকাফ করে তা কাজা আদায় করে নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বাকি সব রমজানে ইতিকাফ করেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণও তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়েছেন। হাদিসে এসেছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু এক বছর ইতিকাফ করতে পারেননি। পরবর্তী বছর ২০ রাত (দিন) ইতিকাফ করেছেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৪৬৩ (২) ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর লাভ করার সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর লাভের আশায় একবার রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেন। এরপর কয়েকবার ইতিকাফ করেন মাঝের ১০ দিন। এরপর এক সময় শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতে শুরু করেন এবং ইরশাদ করেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর। সহিহ বুখারি, হাদিস ২০২০ আরেক হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের মাঝের ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর এভাবে ইতিকাফ করার পর যখন রমজানের ২১তম রাত এলো তখন তিনি ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। কারণ আমাকে শবেকদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে, তা শেষ দশকের অমুক রাত।) এরপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা শেষ দশকে শবেকদর অন্বেষণ কর এবং প্রতি বেজোড় রাতে অন্বেষণ কর। সহিহ বুখারি, হাদিস ২০২৭ (৩) ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকার হলো- ইতিকাফকারী অত্যন্ত পবিত্র ও গোনাহমুক্ত পরিবেশে থাকে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এখানে তার অবস্থানটিই এক ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। তাই সে অবসর সময়ে কোনো আমল না করলেও দিনরাত তার মসজিদে অবস্থান করাটাই স্বয়ং ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। সুবহানাল্লাহ। এ ছাড়াও ইতিকাফকারী দুনিয়ার যাবতীয় ঝুট ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে। আল্লাহর ইবাদতের জন্য নিজেকে পূর্ণ প্রস্তুত করে আল্লাহ-অভিমুখী হয়। (৪) ইতিকাফের মাধ্যমে রোজার যাবতীয় হক ও আদব রক্ষা করার তৌফিক হয়। ইত্যাদি।

0 Comments

Your Comment