গুজব ছড়ানো কবিরা গুনাহ

ইসলাম শান্তির ধর্ম। সত্য ধর্ম। এ ধর্মে মিথ্যার স্থান নেই। মিথ্যাবাদীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির বিধান রয়েছে। মিথ্যা বলে গুজব ছড়ানো মুনাফিকের আলামত। মুনাফিকদের দুনিয়াতে সবাই ঘৃণা করে। মুনাফিকের স্থান আখিরাতে জাহান্নামের নিম্নস্তরে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি :- ১. যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে। ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। ৩. আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে খেয়ানত করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩)। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর তা আরোপ করে তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১২)। কোনো খবর যাচাই-বাছাই করা ছাড়া তা বিশ্বাস করা অনুচিত। পবিত্র কোরআনে ভুল তথ্য অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর, এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ৎ তলব করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)। সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই তা যাচাই করে নিতে হবে। সংবাদটি সত্য কি না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসিক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে তা যাচাই কর। অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই গুজব ছড়ানোকে সমর্থন করে না। ইসলামের শিক্ষা হলো- মানুষ সর্বতোভাবেই তা পরিহার করবে। বরং প্রয়োজন ব্যতীত কোনো কথা সে বলবে না। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০১)। তাই কোনো চটকদার খবর চোখে পড়লেই যাচাই-বাছাই ছাড়া তা নিয়ে মাতামাতি করা উচিত নয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে- ‘সব শোনা কথা (যাচাই-বাছাই করা ছাড়া) বলা কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)। আবার গুজব ছড়ানোর কারণে এতে বিভ্রান্ত হয়ে যদি সমাজে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়, এর দায়ভারও যিনি গুজব ছড়িয়েছেন তার ওপর এসে বর্তাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎ পথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৯)। বর্তমান অনলাইন অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম। এ মাধ্যমকেই অনেকে মিথ্যা বানোয়াট প্রচার প্রসারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফেসুবক, ইউটিউবে প্রতিনিয়তই মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে মানুষকে ধোঁকায় ফেলছে। মূলত এ গুজব ছড়ানো এর প্রচার-প্রসার করা মিথ্যার দিকে, ভ্রষ্টতার দিকে ডাকারই নামান্তর। মহান আল্লাহ সবাইকে এ ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত রাখুন। আমিন।

0 Comments

Your Comment