তিন কাজে মুক্তি, তিন কাজে ধ্বংস

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তিন বস্তু মুক্তিদানকারী আর তিন বস্তু ধ্বংসকারী। মুক্তিদানকারী তিনটি বস্তু হলো—(১) গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করা, (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে সত্য কথা বলা, (৩) সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী তিনটি বস্তু হলো—(১) প্রবৃত্তি পূজারি হওয়া, (২) লোভের দাস হওয়া এবং (৩) অহংকারী হওয়া। আর এটিই হলো সবচেয়ে মারাত্মক। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৬৮৬৫; মিশকাত, হাদিস : ৫১২২) মুক্তিদানকারী তিন বস্তু তাকওয়া : অর্থ আল্লাহকে ভয় করা, যা শয়তানের আনুগত্য থেকে মানুষকে রক্ষা করে। একইভাবে এটি মানুষকে সব অসৎকর্ম ও জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মোরো না...।’(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০২) মুমিনরা সুদ-ঘুষ, জিনা-ব্যভিচার এবং সব ধরনের অন্যায় থেকে বিরত থাকে শুধু আল্লাহর ভয়ে। তাই তাকওয়া হলো ব্যক্তি ও জাতীয় উন্নতির চাবিকাঠি। সদা সত্য কথা বলা : আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯) রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী বস্তু দুটির জামিন হবে, আমি তার জান্নাতের জামিন হবো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪) সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা : আল্লাহ বলেন, ‘(আল্লাহর বিনয়ী বান্দা তারাই) যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং উভয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭) ধ্বংসকারী তিন বস্তু প্রবৃত্তি পূজারি হওয়া : আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কাফিরদের বলে দাও যে, আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যাদের আহবান করো, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। বলে দাও, আমি তোমাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করব না। ফলে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাব এবং সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৬) লোভের দাস হওয়া : মহান আল্লাহ ইহুদিদের সম্পর্কে বলেন, ‘তুমি তাদের পাবে পার্থিব জীবনের প্রতি অন্যদের চেয়ে বেশি আসক্ত, এমনকি মুশরিকদের চেয়েও। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে যেন সে হাজার বছর বেঁচে থাকে। অথচ এরূপ দীর্ঘ আয়ু তাদের (মৃত্যু বা আখিরাতের) শাস্তি থেকে দূরে রাখতে পারবে না। আসলে তারা যা করে, সবই আল্লাহ দেখেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৯৬) ইসলামের নীতি হলো নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়া যাবে না। রাসুল (সা.) আবদুর রহমান বিন সামুরা (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। কেননা, যদি তুমি সেটা চাওয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত হও, তাহলে তোমাকে তার দিকে সোপর্দ করা হবে (আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা হবে)। আর যদি না চেয়ে পাও, তাহলে তুমি সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬২২) অহংকারী হওয়া : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতগুলো মিথ্যা বলে এবং তা থেকে অহংকার ভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সুচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। এভাবেই আমি অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করে থাকি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৪০)

0 Comments

Your Comment