বেকারত্ব নিয়ে কটু কথা ইসলাম পছন্দ করে না

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়ার পর একটি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে আমাদের তরুণরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোতে না পারা লোকজনও বেকারত্বের জ্বালা বুকে বয়ে বেড়ায়। আবার দেখা যায়, হঠাৎ চাকরি হারিয়ে সচ্ছল মানুষের গলায়ও বেকারত্বের কালো মালা জুটে যায় কখনো কখনো। তরুণ বয়সে বেকার থাকার মতো কষ্ট পৃথিবীর বুকে আর নেই। ওই সময় বেকারত্ব নিয়ে আপন বাবা-মাও ছেড়ে কথা বলেন না। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সামনে মুখ দেখানো যায় না। সবচেয়ে কষ্ট লাগে তখন, চাকরি হবে হবে করেও অবশেষে হয়ে উঠে না যখন। দুনিয়ার সবাই কাজের কথা বলেন। বেকারত্বের নিন্দা করেন। ইসলামেও বেকারত্বকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু মানুষের বেকারত্ব নিয়ে কটু কথা বলা, কষ্ট দেওয়া এগুলো কখনই ইসলাম পছন্দ করে না। মনে রাখতে হবে, ইসলাম হলো একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এখানে বেকারত্বের যেমন নিন্দা রয়েছে, তেমনি বেকারদের প্রতিও রয়েছে সহমর্মিতা। আমরা বেকারত্বকে নিন্দা করতে গিয়ে ভুলে বেকার বন্ধুদের মনে আঘাত দিয়ে ফেলি। আর কোনো মানুষের মনে আঘাত দেওয়া নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহ। বেকারদের সচরাচর আত্মীয়স্বজনই কষ্ট দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কিন্তু আত্মীয়তার অধিকার ক্ষুণ্নের গুনাহও আমলনামায় জমা হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, যারা বেকার তারা কিন্তু একদিক থেকে সোনার মানুষ। এরা চাইলেই অবৈধ-অন্যায় পথে কামাই করে ইমেজ সংকট কাটাতে পারে। আদিকাল থেকেই সৎপথে অর্থ উপার্জনের চেয়ে অসৎপথে উপার্জন অনেক সহজ দেখে আসছে পৃথিবী। সুদের কারবার, ঘুষের দালালি, চাঁদাবাজি, অশ্লীলতার ছড়াছড়িসহ হাজারো পথ খোলা থাকা সত্ত্বেও এ মানুষগুলো আল্লাহ, আল্লাহর রসুলকে ভালোবেসে জাহান্নামের আগুনকে ভয় করে সৎপথে দুটো পয়সা উপার্জনের জন্য চেষ্টা করছে। কোথায় আমরা এদের পাশে দাঁড়াব, কাজের খোঁজ করে দেব, তা না করে উল্টো এদের নিয়ে মন্দ বলছি। আমাদের সম্পর্কেই আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে রসুল (সা.) সতর্ক করে গেছেন। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ এহইয়াউল উলুমুদ্দিনের তৃতীয় খন্ড থেকে একটি হাদিস শোনাচ্ছি আপনাদের। জলিলে কদর সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘শিগগির এমন একটা সময় আসবে যখন ধার্মিকের ধর্ম বাঁচানোই কষ্ট হয়ে যাবে। হিংস্র বাঘের সামনে খরগোশ যেমন অসহায় হয়ে পড়ে, সমাজের চোখে ধার্মিকরা তেমন অসহায় হয়ে পড়বে। খরগোশ যেমন জীবন বাঁচাতে এ গর্ত থেকে ও গর্তে পালিয়ে বেড়ায় তেমনি ধার্মিকরাও ধর্ম বাঁচানোর জন্য এখান থেকে ওখানে পালিয়ে বেড়াবে। আর এভাবেই তাদের ধর্ম বাঁচিয়ে চলতে হবে।’ সাহাবিরা বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! এ তো খুব ভয়াবহ অবস্থা। এমনটা কেন হবে?’ জবাবে রসুল (সা.) বললেন, ‘এটা তখন হবে, যখন হালাল উপায়ে জীবিকার বড় কোনো উৎস খোলা থাকবে না। এ সময় এলে তোমাদের ওপর বিয়েশাদি না করা এবং পরিবার থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব হবে।’ সাহাবিরা বললেন, ‘কিন্তু আপনিই তো আমাদের বিবাহের আদেশ দিয়েছেন এবং আত্মীয়তা বজায় রাখতে বলেছেন, তাহলে বিয়ে না করা কীভাবে ওয়াজিব হবে?’ রসুল (সা.) বললেন, ‘ওই সময় মানুষ নিজ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান এবং আত্মীয়দের কারণে ইমান-আমল নষ্ট করে জাহান্নামি হয়ে যাবে। তাই ইমান বাঁচানোর তাগিদেই তোমরা নির্জনতা অবলম্বন করবে।’ সাহাবিরা তখনো বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। তারা আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! আপনজন কীভাবে মানুষকে ধ্বংস করবে?’ রসুল (সা.) বললেন, ‘এসব আত্মীয়স্বজন মানুষকে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের জন্য সবসময় খোঁচা দিয়ে কথা বলবে। কথায় কথায় তাদের মর্যাদাহানি করবে। ফলে সে মান বাঁচাতে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপায়ে উপার্জন করবে। কাক্সিক্ষত অর্থের জন্য হালাল হারামের পরোয়া করবে না। আর এভাবেই তার ধর্মজীবন নষ্ট হয়ে যাবে।’ (এহইয়াউল উলুমুদ্দিন, তৃতীয় খন্ড।)

0 Comments

Your Comment