মহিমান্বিত রমজান সমাগত। রমজান মুমিনের জন্য পাথেয় সংগ্রহের সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন এবং তিনি উম্মতকেও অধিক পরিমাণ ইবাদত করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। রমজানের মূল্যবান সময়কে কাজে লাগাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণীয়। ১. রমজানের মর্যাদা সম্পর্কে জানা মর্যাদা না জানলে মানুষ কোনো কিছুর মূল্যায়ন করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে রমজানের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন। তাই রমজান সম্পর্কে নিজে অবগত হওয়া এবং অন্যকে সচেতন করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫) ২. চাঁদ দেখে দোয়া পড়া রমজানের চাঁদ অনুসন্ধান করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের চাঁদ দেখতেন এবং নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতেন। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) নতুন চাঁদ দেখে এই দোয়া পড়তেন—(উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত করো নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ১২৩৬) ৩. চাঁদ দেখে রোজা রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ এলাকায় চাঁদ দেখে রমজানের রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চাঁদ না দেখে তোমরা রোজা পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার করবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে তার সময় (৩০ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৬) ৪. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা রমজান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। তাই রমজানে উপনীত হলে মুমিন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা থেকে অন্য জুমা এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি সে কবিরা গুনাহতে লিপ্ত না হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩৮) ৫. আল্লাহর কাছে প্রতিদান আশা করা রমজানের সুফল ও প্রতিদান লাভের জন্য আল্লাহর কাছে তা আশা করা আবশ্যক। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১) ৬. বেশি বেশি নেক আমল করা রমজানে আল্লাহ আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন। তাই রমজানে অধিক পরিমাণ নেক আমল করা আবশ্যক। যেমন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে একটি ওমরাহ করা একটি ফরজ হজ করার সমান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৩) ৭. বেশি বেশি তাওবা করা রমজান গুনাহ মাফের মাস। তাই রমজানে অধিক পরিমাণ তাওবা করা আবশ্যক। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তার নাক ভূলুণ্ঠিত হোক যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হলো, কিন্তু সে আমার ওপর দুরুদ পাঠ করেনি। ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক যার কাছে রমজান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই তা পার হয়ে গেল। আর ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক যার নিকট তার মা-বাবা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলো, কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়নি (সে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে জান্নাত অর্জন করেনি)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫) ৮. অবস্থানস্থলের সময় অনুসরণ করা রোজাদার ব্যক্তি যে এলাকায় অবস্থান করবে, সে এলাকারই সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় অনুসারে রোজাদার ব্যক্তি সাহরি ও ইফতার করবে। কুরাইব (রহ.) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে যে তিনি সিরিয়া থেকে মদিনায় এলে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) স্থানীয় সময় অনুসারে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে নবী (সা.) এরূপই করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২১১১) ৯. সদকাতুল ফিতর আদায় করা রমজান শেষে সদকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক। মুমিন ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই তা আদায় করবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের ওপর রমজান মাসের সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব করেছেন। এক এক ‘সা’ করে খেজুর অথবা এক এক ‘সা’ করে যব প্রত্যেক মুসলমান স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ এবং নারীর ওপর। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৫০৩) ১০. রমজানের শিক্ষা জীবনে ধারণ করা রমজান হলো ঈমান ও আমলের প্রশিক্ষণ কাল। মুমিন এই সময় ইবাদত ও আনুগত্যের অনুশীলন করে এবং সারা বছর সে অনুসারে আমল করে। কেননা কোনো আমল করার পর তা ছেড়ে দেওয়া নিন্দনীয়। পবিত্র কোরআনে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সেই (নির্বোধ) নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সুতা শক্ত করে পাকিয়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে।’ (সুরা ; নাহল, আয়াত : ৯২) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, ধারাবাহিক আমল। যদিও তা অল্প হয়। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৪২৪০)
0 Comments
Your Comment