রোজা ইসলামের পঞ্চমস্তম্ভের অন্যতম এবং ফরজ বিধান। তবে রোজা ফরজ হওয়া এবং তা আদায় করা আবশ্যক হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো। যাদের ওপর রোজা ফরজ ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ব্যক্তির ভেতর তিনটি শর্ত পাওয়া গেলে তার ওপর রোজা ফরজ হয়। তা হলো— ১. মুসলিম হওয়া : কোনো অমুসলিমের জন্য ইসলামী রীতিতে রোজা পালন অনুমোদিত নয়। সুতরাং কোনো নওমুসলিমের জন্য ইসলাম গ্রহণের আগের রোজাগুলো কাজা আদায় করা আবশ্যক নয়। ২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া : প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে কোনো মুসলিমের ওপর রোজা ফরজ হয় না। তবে সাহাবিরা শিশু সন্তানদের রোজায় অভ্যস্ত করতে শৈশব থেকে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। ৩. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া : পাগল ও জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে এমন ব্যক্তির ওপর রোজা ফরজ নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে কলম (হিসাব) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে : জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘুমন্ত ব্যক্তি, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশু এবং জ্ঞান ফিরে পাওয়া পর্যন্ত পাগল ব্যক্তি।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৪০৩; ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/৩০৩) যখন রোজা ভাঙার অবকাশ থাকে রোজা ফরজ এমন ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা আবশ্যক হয় নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলে। অর্থাৎ নিম্নোক্ত শর্ত পাওয়া না গেলে ব্যক্তির জন্য রোজা না রাখার অবকাশ আছে। শর্তগুলো হচ্ছে— ১. অসুস্থ হওয়া : অসুস্থ, রোজা রাখলে ক্ষতি হয় এমন হলে ব্যক্তির ওপর রোজা রাখা আবশ্যক নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।” (সুরা ; বাকারা, আয়াত : ১৮৪) ২. মুসাফির হওয়া : মুকিম বা নিজ এলাকায় অবস্থান করা রোজা আদায় আবশ্যক হওয়ার শর্ত। কোনো ব্যক্তি মুসাফির হলে তার ওপর রোজা আদায় করা আবশ্যক নয়। বরং সে চাইলে রোজা ছেড়ে দিতে পারবে। তবে সফর শেষে তা কাজা আদায় করতে হবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।” (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৪) ৩. শরয়ি নিষেধাজ্ঞা থাকা : নারীদের হায়েজ (মাসিক) ও নিফাস (প্রসব-পরবর্তী স্রাব) থাকলে তাদের জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়। এমন সময় তারা রোজা থেকে বিরত থাকবে। পরবর্তী সময়ে তা কাজা করে নেবে। কেননা হায়েজ ও নিফাস রোজা ভাঙার শরিয়ত অনুমোদিত কারণ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/৩০৩; আল-ফিকহুল ইসলামী ও আদিল্লাতুহু, রোজা অধ্যায়) দুই কাজ ছাড়া রোজা হয় না রোজার রোকন বা মূলভিত্তি দুটি—যা ছাড়া রোজার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তা হলো— ১. নিয়ত : বেশির ভাগ ফকিহের মতে, রমজানের রোজার নিয়ত করা আবশ্যক। যেন নিয়তের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তথা ইবাদতের উদ্দেশ্যে পানাহার থেকে বিরত থাকছে। হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ফজরের আগে রাত থাকতে রোজার নিয়ত করল না তার রোজা গ্রহণযোগ্য নয়।’ (মুসনাদে আহমদ) তবে ‘আমি আল্লাহর জন্য রোজা রাখছি’ এ কথা মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়; বরং রোজা রাখার জন্য শেষ রাতে ওঠা এবং সাহরি খাওয়াই যথেষ্ট। ২. ইমসাক (সংযম) : আল্লাহ রোজাদারের জন্য যেসব কাজ নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা এবং সংযম প্রদর্শন করা। সাহরির শেষ সময় থেকে সূর্যাস্তের পর পর্যন্ত খাওয়া, পান করা, স্ত্রী-সঙ্গম ইত্যাদি পরিহার করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে উষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত আসার আগ পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)
0 Comments
Your Comment