ঢাবিতে নিপীড়নের বিচার দাবিতে ক্লাস বয়কট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রথমে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন। এরপর সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনীত যৌন নিপীড়নের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ সময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও পোস্টার হাতে সাংবাদিকতা বিভাগের করিডোরে অবস্থান নিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। পরে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয় ঘুরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। এর মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা। যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনা এবং তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখা। এর আগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ ও রোবায়েত ফেরদৌস পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা উত্থাপিত দাবি নিয়ে উপাচার্যের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে কেবল আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া যাবে না জানিয়ে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যান। গত শনিবার ঢাবির প্রক্টর বরাবর সাংবাদিকতা বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেন নিজেদের ঈশ্বর মনে না করেন এবং নম্বর যেন মেধার ভিত্তিতে যাচাই হয়। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাওয়ার সালসাবিল দুর্দানা বলেন, নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মেধা যাচাই করেন না। যাচাই করেন হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট এবং ফোনের আলাপ। যেকোনো টার্ম পেপার জমা দিতে হলে আমাকে তার পছন্দ হবে কি হবে না সেটা নিয়ে ২ ঘণ্টা ফোনে কথা বলতে হবে। পরবর্তীতে তিনি বলবেন, আমার কথা বলা কম হয়েছে; তাই আমাকে তিনি ১০-এ দুই বা তিন দেবেন। তাহলেই বুঝতে পারছেন কতটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহি নায়াব বলেন, নাদির জুনাইদের যৌন হয়রানির বিষয়টি বর্তমানে ভাইরাল হলেও এটি তিনি অনেক আগে থেকেই করে আসছিলেন। প্রতিটি ব্যাচেরই দু-তিনজন সুন্দরী নারী শিক্ষার্থীকে তিনি টার্গেট করে রাখতেন। এবং পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। আমাদের বোনদের সঙ্গে যে যৌন নিপীড়ন হয়েছে, আমরা তার বিচার চাই। তদন্ত কমিটি করার আশ্বাসে এবার আর কাজ হবে না। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামদানি বলেন, উনার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বিষয়টি সবাই জানত। ভীতির সংস্কৃতি চর্চার কারণে এতদিন কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। একজন ভিক্টিম যখন সাহস করে প্রতিবাদ করেছেন তখন আমরা চুপ থাকতে পারি না।

0 Comments

Your Comment