তুলে এনে হলে নির্যাতন : ঢাবি ছাত্রলীগের তিন নেতা কারাগারে

ধারের টাকা ফেরত দিতে দেরি হওয়ায় দেনাদার ও তার বন্ধুকে বাসা থেকে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে আনেন ছাত্রলীগের তিন নেতা। সেখানে আটকে রেখে তিনদিন ধরে নির্যাতন চালান। এমন অভিযোগে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা হয় অপহরণের মামলা। এ ঘটনায় ঢাবি হল ছাত্রলীগের তিন নেতাসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর তাদের সোমবার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। অভিযুক্তরা হলেন মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক মোনতাছির হোসাইন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপসম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ ওরফে তানসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাসান সাঈদি এবং মোনতাছিরের আত্মীয় মো. শাহাবুদ্দীন। ওই তিন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে জানিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী ডিসিপ্লিন বোর্ডের সভায় তাদের বিষয়টি উত্থাপিত হবে। সেখানে তাদেরকে অ্যাকাডেমিক বহিষ্কার করা হতে পারে অথবা অন্য শাস্তি দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি- এসব বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা-বহির্ভূতকাজে জড়িত থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবেই।’ এর আগে গত শনিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় পুলিশের অভিযানে মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষ থেকে অপহৃত দুজনকে উদ্ধার করা হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসার কথা বলে মোনতাছির হোসাইনের আত্মীয় মো. শাহাবুদ্দীনের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন আবদুল জলিল নামের এক ব্যক্তি। তিনি টাকা ফেরত দিতে দেরি করেন। সে কারণে শাহাবুদ্দীন গত ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত দুইটার দিকে তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ ১০-১২ জনকে নিয়ে আবদুল জলিল ও তার বন্ধু হেফাজ উদ্দীনকে হাতিরঝিলের হাজীপাড়ার বাসা থেকে তুলে আনেন। তাদের প্রথমে বিজয় একাত্তর হল, পরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে আটকে রাখেন। আব্দুল জলিলের পরিবার মামলা দায়ের করার পর আটকদের উদ্ধার করা হয়। হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বিদেশে থাকায় হল প্রশাসন এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আগামীকাল মঙ্গলবার মাসুদুর রহমান দেশে ফিরবেন। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সেনসিটিভ। বিশ্ববিদ্যালয় শবে বরাত উপলক্ষে ছুটি এবং প্রাধ্যক্ষ স্যার কালই ফিরবেন, তাই আমরা অপেক্ষা করছি, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার উনি আসার পরেই নেবেন।’ তবে হল প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত তিন ছাত্রের মধ্যে দুজনের কোনো আবাসিকত্ব নেই। অর্থাৎ তারা অনাবাসিক। ফলে হল প্রশাসনের পক্ষে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালত প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।’

0 Comments

Your Comment