মাত্র ৩০ হাজার টাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশি! বাংলাদেশের নাগরিক হতে ফেসবুক, হোয়াটসআপ, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ খুলে আকৃষ্ট করছে রোহিঙ্গাদের। পরে পেজের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা দুর্বৃত্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে তাদের নিজ এলাকার বাইরে অন্য জেলার ইউনিয়ন এবং পৌরসভার জন্ম নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িতদের মাধ্যমেই করিয়ে নিচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। সম্প্রতি এমন খবরের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এর সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না, মো. রাসেল খান, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আবদুর রশিদ ও সোহেল চন্দ্র। ডিবি বলছে, তারা সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নির্দিষ্ট আইডি ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজটি করে আসছেন। গতকাল রাজধানীর মিন্টু রোডের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গ্রেফতার আবদুর রশিদ দিনাজপুরের বিরল পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর এবং সোহেল চন্দ্র বিরলের ১০ নম্বর রানীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সচিবের জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সেখানকার বাসিন্দা দেখিয়ে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ এবং নম্বর দিয়ে আসছিল তারা। এ ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন ব্যক্তির ভুয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দেওয়ার কাজ দিত মোস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম মুন্না ও রাসেল খান। মুন্না ও রাসেল বাগেরহাট এবং নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তারা পাঁচজনই একে অপরের পরিচিত এবং পরস্পরের সহায়তায় স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরলের অধিবাসী দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ সরবরাহ করে আসছিল। এ কাজে তারা সবাই আনুপাতিক হারে টাকার ভাগ পেত। গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুষ্টিয়া, ব্র্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য পৌরসভা ও ইউনিয়নে তাদের লোকজন রয়েছে। যারা ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে কয়েক হাজার মানুষের ভুয়া জন্মনিবন্ধন করে দিয়েছে। যারা কাজ এনে দিতেন তারা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিতেন। অপারেটররাও রোহিঙ্গা শুনলে একটু বেশি টাকা চাইতেন। এসব জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাচ্ছে। অনেক অপরাধী আবার অপরাধ করে নিজ এলাকার বাইরে আরেকটি জন্মনিবন্ধন করে তাদের পরিচয় গোপন করে নতুনভাবে অপরাধ শুরু করে। অনেক ভুয়া পাসপোর্ট তৈরিতে এই জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করেছে। যাতে ব্যাংক লোন ও অনলাইন অপরাধে পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারে। ভুয়া জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করছে। এসব জন্মনিবন্ধন দিয়ে অনেক দাগী/কুখ্যাত খুনি, ডাকাত এবং রাষ্ট্ররিরোধী অপরাধী চক্র নিজেদের পরিচয় গোপন করে ফেলতে সক্ষম হয়। এভাবে নতুন পরিচয়ে আবার অপরাধ শুরু করতে পারছে। ডিবির এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে দুজন কম্পিউটার অপারেটর, একজন স্থানীয় একটি গার্মেন্ট এবং অপর দুজন পড়শোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত রয়েছে। চক্রটি ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি, বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরিতে ব্যাপক লাভ দেখে তারা এই কাজে জড়িত পড়ে।
0 Comments
Your Comment