মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাত আরও ঘনীভূত হয়েছে। বেড়েছে ভয়াবহতাও। মুহুর্মুহু গুলির শব্দ আর মর্টার শেলে কেঁপে কেঁপে ওঠে মিয়ানমার সীমান্ত। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সে দেশের অনেক নাগরিক অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা ও পুলিশসহ ২৬৪ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পাশাপাশি কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য পাওয়া গেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশি, যারা সীমান্ত এলাকায় বসবাস করেন তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের দুটি বসতঘরে মর্টার শেল এবং আরও পাঁচটি ঘরে গুলির আঘাত হেনেছে। গতকাল মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে পাঁচ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। যুদ্ধের বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সে দেশের একের পর এক সীমান্তরক্ষী বা সেনা সদস্যের অনুপ্রবেশের ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগ বাড়ছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। বিজিবির সদর দফতরের তথ্যমতে, বিজিপি, সেনা ও পুলিশসহ ২৬৪ জন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। গতকাল দুপুরে নতুন করে আরও ৩৫ জন যোগ হয়েছেন। ২৬৪ জনের মধ্যে বিজিপির সদস্য আছেন ১৮৩ জন। বাকিদের মধ্যে সেনা সদস্য, সিআইডি, পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ইমিগ্রেশন সদস্যসহ বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। নতুন করে আশ্রয় নেওয়া ৩৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়াদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে বিজিবি তাদের বিষয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিয়ানমারে আরাকান আর্মির আক্রমণের মুখে আমার এলাকার সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য পালিয়ে আসে। তারা এখন বিজিবি হেফাজতে রয়েছেন। তাদের মধ্যেও অনেকে আহত রয়েছেন। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ : কক্সবাজার ও বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারে যুদ্ধের জেরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হতাহতের ঘটনা এবং আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেছেন, ইতোমধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। গত সোমবার ঘুমধুমের জলপাইতলী গ্রামে মর্টারের গোলা পড়ে বাংলাদেশি নারী ও রোহিঙ্গা মারা যাওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যারা সীমান্তের কাছাকাছি বাস করছেন, তারা খুবই আতঙ্কে আছেন।
0 Comments
Your Comment