সুন্দরবনে বারবার আগুনের নেপথ্য কাহিনি

বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবনে থামছে না আগুন সন্ত্রাস। এক শ্রেণির অতিলোভী বনজীবীর লাগানো আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে সংরক্ষিত এই ম্যানগ্রোভ বনের একরের পর একর গাছপালা। গত ৫৪ বছরে সুন্দরবনে ৪০ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ২২ বছরে সংরক্ষিত এই ম্যানগ্রোভ বনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। সর্বশেষ গত ৪ মে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় বনে লাগানো হয় আগুন। দুই কিলোমিটার এলাকার ৫০টির অধিক স্থানে লাগানো আগুন ৪৭ ঘণ্টা পর শতভাগ নিয়ন্ত্রণে এলেও বন বিভাগের হিসাবেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি। বন বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে ১৫টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে মৌয়ালদের মশাল ও জেলেদের বিড়ি-সিগারেট টানার পর ফেলে দেওয়া অংশ থেকে। দুটি ছাড়া অন্যসব আগুনসন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় বন বিভাগ। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় আগুন লাগায় অতিলোভী কয়েক বনজীবী। এর মাত্র ১৫ দিন পর ১৩ এপ্রিল একই এলাকায় ফের আগুন লাগে। পুড়ে যায় ৮.৫ একর বন। এই দুটি অগ্নিকাে র ঘটনায় তৎকালীন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তার (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলামের দৃঢ়তায় গডফাদার মো. শাহজাহান হাওলাদারসহ ৬ সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করে তাদের নামে আদালতে মামলা করা হয়। সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা সংগঠন ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’ চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, বাপার বাগেরহাট জেলা আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখসহ আমজনতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের লোকালয় সন্নিহিত ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদী খননের মাটি সুন্দরবন অংশে ফেলার ফলে স্থানটি উঁচু হয়ে যায়। সে কারণে লোকালয় সন্নিহিত সুন্দরবনের একটি বিশাল এলাকায় জোয়ারের পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। উঁচু এলাকায় মূল্যহীন বলা গাছ-লতাগুল্মমের আধিক্য এবং বাঘ ও কিং-কোবরার আবাসস্থলে বর্ষার পানি জমে বনের গহিনে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অন্তত ২৮টি জলাভূমির সৃষ্টি হয়। এসব জলাভূমিতে প্রচুর পরিমাণ কৈ, শিং, মাগুরসহ মিঠা পানির মাছ জন্মে। অবৈধভাবে বনে প্রবেশ করতে ও বর্ষাকালে জাল পেতে এসব মাছ আহরণ করতে বন সন্নিহিত লোকালয়ের একশ্রেণির প্রভাবশালী লোক পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে। বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম জানান, সর্বশেষ গত ৪ মে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় বনে আগুন লাগার ঘটনায় আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আগুন লাগার কারণ ও পরিবেশগত পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসহ ভবিষ্যতের করণীয় নির্ধারণে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।

0 Comments

Your Comment