কাল সাকরাইন, জৌলুস হারিয়েছে উৎসব

কাল রবিবার সাকরাইন উৎসব। পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে ঘুড়িওয়ালাদের দখলে। নীল আকাশে শোভা পাবে নানা রঙ আর বাহারি ঘুড়ি। ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের চিত্র এমনটাই থাকে পুরান ঢাকায়। একে ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তিও বলে। একটা সময় এ উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি। উৎসবে অংশ নেন সব ধর্মের সব বয়সী মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে, অন্যান্য এলাকা বিশেষ করে ‘নতুন ঢাকা’ হিসেবে পরিচিত এলাকার তরুণ-তরুণীরাও এ উৎসবে যোগ দিতে ছুটে যান পুরান ঢাকায়। মূলত; পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, মুরগীটোলা, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতী বাজার, লালবাগ এবং হাজারীবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। বর্তমানে সন্ধ্যায় আতশবাজি ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অঙ্গ। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে হালের ডিজে পার্টি। পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব কমে গেছে আগের তুলনায়। এখন নানা জটিলতায় তরুণরা সাকরাইন উৎসবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়াও আধুনিক যুগের ডিজে পার্টি এবং আতশবাজির কারণে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়েছে। বর্তমানে এই ডিজে পার্টি সাকরাইন উৎসবের অন্যতম বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এমনকি এই ডিজেপার্টিকে কেন্দ্র করে নানা নেতিবাচক ঘটনাও ঘটেছে গত কয়েক বছরে। সাকরাইন উৎসবের দিনে সকাল থেকেই ছাদে ছাদে শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট-বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত থাকে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুস। আর আকাশে বাড়ে ঘুড়ির সংখ্যা। সকালের তুলনায় বিকালে এ উন্মাদনা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ছাদের উপর চলে গানবাজনা আর খাওয়া-দাওয়া। সে সঙ্গে আনন্দের উত্তাপকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা। এছাড়া ঘরে ঘরে তৈরি হয় পিঠা বানানোর ধুম। বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজি। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজির খেলা। সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় রীতি। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে। তবে এ প্রচলন এখন খুব একটা দেখা যায় না। আরও জোর দিয়ে বলা যায়, এটা এখন নেই বললেই চলে।

0 Comments

Your Comment