পরপর দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শিশু দু’টির মা-বাবাও। রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দু’বোনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দু’বোনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া শিশু দু’টির নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। এই দুই শিশুর বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) একজন গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তারা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকতেন। কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন কাজের বুয়া। না ধুয়েই সেই বরই খেয়েছিল এই দম্পতির দুই শিশু সন্তান। এরপরই অসুস্থ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। আর গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। দুজনেরই জ্বর ও বমির মত একই লক্ষ্মণ ছিল। তাই শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তারা দুই মেয়ের দাফনেও অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে এই দম্পতি রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। শনিবার বিকালে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। এখানে গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও দাফন করা হয়েছে। রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। তবে তাদেরকে পাশাপাশি শয্যায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পলি খাতুন জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। সেই বরই না ধুয়েই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। একসঙ্গে খেলাধুলাও করেছে। পরদিন বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ছোট মেয়ে মারিশার শরীরে ভীষণ জ্বর আসে। এ সময় তারা বার বার পানি পান করছিল। দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ পান করে। তবে শহরে অদূরে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মৃত্যু হয় মারিশার। এরপরও তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। তবে সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, শিশু মারিশা আর নেই। এরপর রাজশাহীর দুর্গাপুরে নিয়ে তার লাশ দাফন করা হয়। এদিকে শুক্রবার সকালে মাশিয়ারও শরীরেও জ্বর আসে। একই সাথে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে পরে তাকে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। এরপর রাত বাড়ার সাথে সাথে মাশিয়ার পুরো শরীরেও ছোপ ছোপ কালশিটা দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে দ্রুত রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালের জরুরিভাবে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে সাথে সাথেই আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু আইসিইউতে পর্যবেক্ষণ থাকা মাশিয়াও পরদিন শনিবার বিকালে মারা যায়।
0 Comments
Your Comment