হারিয়ে যাচ্ছে ‘ফলি মাছ’

কিছু দিন আগেও পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ‘ফলি’ মাছ (স্থানীয় নাম ‘কাংলা’)। ধরা পড়তো বড়শিতেও। গ্রামগঞ্জে ব্যাপক চাহিদা ছিল এ মাছের। স্থানীয় মাছের বাজারগুলোতেও থাকতো এ মাছটির প্রতুলতা। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন আর আগের মতো চোখে পড়েনা মিঠা পানির সুস্বাদু এ মাছটি। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক জলাভূমি থেকে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর প্রজনন রক্ষা না করলে এক সময় চিরতরে হারিয়ে যাবে মাছটি। অত্যান্ত চাপা দেহ। পৃষ্ঠ ও পুচ্ছ পাখনা ছোট, লম্বা পায়ু পাখনা। দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার। দেশীয় প্রজাতির এই মাছ শৈবাল, পোকামাকড়, কাঁদা, বালি ও ছোট মাছ খেয়ে জীবন ধারণ করে। বর্ষাকালে একটি মা মাছ ডিম দিয়ে থাকে প্রায় তিন হাজার। ভিটামিন-এ তে ভরপুর এই মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আছে, যা হার্টের জন্য উপকারি। আইইউসিএন বাংলাদেশ’র তালিকানুযায়ী এই প্রজাতিটি সংকটাপন্ন হিসেবে চিহ্নিত। আবাসস্থল কমে যাওয়া আর জল দূষণের কারণেই বর্তমানে হুমকির মুখে এর অস্তিত্ব। স্থানীয় জেলেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা মাছ ধরা ও বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত। কয়েক বছর আগেও নদী-হাওর-বিল থেকে প্রচুর কাংলা মাছ (ফলি মাছ) ধরতেন তারা। ডোবা সেচে চাঙ্গা ভর্তি করতেন এ মাছে। চাহিদা থাকায় বিক্রিও হতো ভালো দামে। কিন্ত এখন এ মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন কুমার ধর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জলাভূমি ভরাট, হাওর-নদীর মধ্যে সংযোগ খাল বন্ধ, অপরিকল্পিত কীটনাশকের ব্যবহার, নির্বিচারে মাছ আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রজননক্ষম মাছের অনুকূল পরিবেশের অভাবের কারণে ফলি মাছ আজ বিপন্ন। এ মাছকে পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নিরাপদ অভয়াশ্রম স্থাপন করতে হবে। কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত ফলি মাছের পোনা হাওরে এবং জলমহালে অবমুক্ত করা চাই। সেই সাথে প্রজনন মৌসুমে অন্তত দুই মাস হাওর অঞ্চলে মৎস্য শিকার থেকে বিরত থাকতে হবে।

0 Comments

Your Comment

Subscribe For

Weekly Newsletter

Subscribe to stay up-to-date on all the latest news