এগোচ্ছে না ব্লু-ইকোনমি

সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে প্রায় এক যুগ আগে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল জলরাশিতে একচ্ছত্র আধিপত্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এতে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ। যথাযথ পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির অভাবে তা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্লু-ইকোনমি (সুনীল অর্থনীতি)-এর সুফল উঠছে না ঘরে। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের বিশাল মৎস্য সম্পদের মাত্র ১ শতাংশ ঘরে তুলতে পারছে বাংলাদেশ। বাকি ৯৯ শতাংশ সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে অন্য দেশগুলো। ব্লু-ইকোনমিতে যেসব খাতকে সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম মৎস্যসম্পদ। তবে এটি ‘চলমান সম্পদ’ বলে কোনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। ঝাঁক ধরে চলার সময় বাংলাদেশের জেলেরা বিপুল পরিমাণ এই মৎস্যসম্পদ সংগ্রহ করতে না পারলেও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ট্রলার দিয়ে এর অধিকাংশ সংগ্রহ করে নিয়ে যায় বঙ্গোপসাগর সীমানা সংলগ্ন অন্যান্য দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের যে অঞ্চলের মালিকানা পেয়েছে, সেখানে অন্তত চারটি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালানো হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জন করা সম্ভব। জাপানি সংস্থা জাইকার অর্থায়নপুষ্ট একটি প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনটেম কনসাল্টিং ইনকরপোরেশনের স্থানীয় পরামর্শক মো. সফিউদ্দিন বলেন, নানা প্রজাতির মূল্যবান মাছ ছাড়াও সমুদ্রসীমায় নানা ধরনের প্রবাল, গুল্মজাতীয় প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির চিংড়ি, তিন প্রজাতির লবস্টার, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়। মাছ ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের কিছু উদ্ভিদ এবং শামুক-ঝিনুকের চাহিদা রয়েছে বিদেশে। এ ছাড়া সঠিক পদ্ধতিতে সংগৃহীত মাছ থেকে শুঁটকি তৈরি করে তা বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির অভাবে ব্লু-ইকোনমির সুফল ঘরে তুলতে পারছে না বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরের অন্য দেশগুলো সেই সুযোগ ঘরে তুলছে। দুই বছর আগের তথ্য দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সেভ আওয়ার সি’ বলছে, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর থেকে ৮০ লাখ টন মাছ ধরা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের জেলেরা ধরতে পারে মাত্র ৭ লাখ টন মাছ, যা ১ শতাংশেরও কম। বাকি মাছ চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব গাজী আনোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সমুদ্রের ট্রান্স বাউন্ডারি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী কোনো একটি দেশ যখন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন একই সমুদ্রসীমায় অন্য দেশগুলোকেও নিষেধাজ্ঞা দিতে হয়; এক্ষেত্রে বাংলাদেশে যখন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, তখন অন্যরা সেটি অনুসরণ করে না। আবার মাছ যেহেতু কোনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জেলেরা বঙ্গোপসাগর থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরে নিয়ে যায়।

0 Comments

Your Comment