বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির ঐতিহ্য আড়াই শ বছরের। বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুনাম কুড়িয়েছে তাঁতের এই শাড়ি। বৈচিত্র্যময় নকশার কারণে টাঙ্গাইল শাড়ির প্রতি বাঙালি নারীদের রয়েছে আলাদা টান। কিন্তু বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে’। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ দাবি করছে। এ দাবিতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনারসহ বিশেষজ্ঞরা এতে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন করছেন, টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গের কীভাবে! এই ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের তাঁত-সংশ্লিষ্ট মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। তারা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান। জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারির দুই তারিখে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। দেশটির জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রির তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তশিল্প বিভাগ এজন্য ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আবেদন করেছিল। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাজিতপুর, করটিয়া, সন্তোষ, বিন্যাফৈর, বেলতা, বড় বেলতাম, দেলদুয়ার উপজেলার চণ্ডি, পাথরাইল, নলসোঁধা, নলুয়া, দেউজান ও বকুলতলা, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, কুকরাইল গ্রামের প্রায় সব তাঁতপল্লীগুলোতে তাঁতের শাড়ি তৈরি হয়। আর তাঁতের সঙ্গে মালিক শ্রমিকসহ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জড়িত রয়েছেন। তাঁত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, টাঙ্গাইল যেহেতু বাংলাদেশের একটি জেলা এবং ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজস্ব ঐতিহ্য বহন করে সারা বিশ্ব নাম করেছে। এটা কোনোভাবেই ভারতের পণ্য হিসেবে জিআই পেতে পারে না। যদি ভারতের নিজস্ব পণ্য হতো তাহলে কেন টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি নামকরণ হয়েছে, ভারতে টাঙ্গাইল জেলা নামে কোনো জেলা নেই। দ্রুত ভারতের জিআই বাতিল করে টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতির দাবি উঠেছে।
0 Comments
Your Comment