বৈশ্বিক টানাপোড়েন ও অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে একক মাস হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৯৭ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় একক মাস হিসেবে এটি সর্বোচ্চ। রপ্তানিকারকরা বলছেন পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ। প্রণোদনা পুনর্বহালের সঙ্গে চাহিদামতো গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডলার চান তারা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের। প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি ৩১ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাকি পাঁচ মাসে আয় করতে হবে ২ হাজার ৩৬৪ কোটি ডলার। প্রতিমাসে আয় করতে হবে প্রায় ৪৭৩ কোটি ডলারের পোশাক। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের বড় খাত তৈরি পোশাকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪২ কোটি ডলার। পোশাকের রপ্তানির ওপর ভর করে সার্বিক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে ৪৯৭ কোটি ডলার আয় হয়েছে, যা এর আগে কখনো হয়নি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এদিকে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেওয়ার পরও জানুয়ারি মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতেও অভ্যন্তরীণ সংকট আর প্রণোদনা কমানোর ঘোষণায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে পোশাক খাতে। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন এখাতের উদ্যোক্তারা। বাকি পাঁচ মাসে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা কতটা অর্জিত হবে, তা নিয়ে সন্দিহান তারা। পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি এবং আমাদের দেশে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের পরও বাংলাদেশের পোশাক খাত রেকর্ড ভাঙছে এবং রেকর্ড গড়ছে। ডেনিম পোশাক বিশ্বের প্রথম, সুতার তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রথম এবং একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের নতুন রেকর্ড। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিংয়ের ফলে আমাদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। এবিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা আসলে একটা নীতিগত বাধ্যবাধকতা। এটা মানতেই হবে। সরকারি এই সিদ্ধান্ত এই শিল্পের ওপর এলে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, প্রথমত গার্মেন্ট খাত দীর্ঘদিন ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে। তাই এ প্রণোদনা যে তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে তা বলার সুযোগ নেই। কারণ এ খাত আর প্রাথমিক অবস্থায় নেই। ইপিবির তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত থেকে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি ৩১ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬১৮ কোটি ডলার সমমূল্যের এবং ওভেন পণ্যের (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
0 Comments
Your Comment