বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ সিন্ডিকেট

রোজার আগে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাজার সিন্ডিকেট। ডলার সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধি, এলসি সংকট ইত্যাদি সমস্যা তুলে ধরে তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। চাল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুর, মাংস, ডিম, পিঁয়াজ, ফল, কাঁচা সবজিসহ এমন কোনো পণ্য নেই যেখানে সিন্ডিকেটের হাত পড়েনি। এমনকি মূল্যসংক্রান্ত স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও সরকারি সংস্থাগুলোকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার। সূত্র জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি চক্র অহেতুক পণ্যের দাম বাড়াতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে বলে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল। এখন রমজানের আগে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাজার সিন্ডিকেট। নানা অজুহাতে তারা দাম বাড়াচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির সুযোগের অপেক্ষায় শিয়ালের মতো ওত পেতে থাকে এ সিন্ডিকেট। সংশ্লিষ্টরা জানান, সক্রিয় এ সিন্ডিকেট প্রতিদিন সকালে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি না করলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। অনেক সময় হুমকিধমকিও দেওয়া হয়। গরুর মাংস কম দামে বিক্রি করায় খুনের ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া আলু, পিঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোবাইল মেসেজে নির্ধারণ করে দেওয়ার তথ্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানান, শুল্ক হ্রাসের পর যখন চিনির দাম কমানোর বিষয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তখনই শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সরকারি কলের চিনির দাম একলাফে কেজিতে ২৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। গত বৃহস্পতিবার দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর ওই দিন রাতে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা বলা হলেও ততক্ষণে চিনির বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় না করে সরকারি সংস্থার দাম বাড়ানোর ঘোষণার কারণেই সুযোগ নেন বেসরকারি মিল মালিকরা। রাজধানীর বৃহত্তম পাইকারি মোকাম মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি গোলাম মাওলা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় রমজানে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো ও দাম সহনীয় রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দেন। সভা শেষে এসেই শুনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংস্থা বিএসএফআইসি সরকারি চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ নেন চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। তারা পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেন। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি ১৬০ টাকায় উঠে যায়।’ মৌলভীবাজারের এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘ভারতে যেখানে চিনির কেজি ৪০ টাকা, সেখানে দেশে দেড় শ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে!’ তার অভিযোগ, চিনি পরিশোধনকারী চার-পাঁচটি কোম্পানি সিন্ডিকেট করে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

0 Comments

Your Comment