নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে আগুন। এর মধ্যে বেড়েছে সব কোম্পানির ওষুধের দাম। ওষুধের দাম বাড়ায় রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। আরও বড় অঙ্কে ওষুধের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিকে ওষুধের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার কারণ হিসেবে দায়ী করছে ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও আইন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের ওষুধের বাজারে প্রায় ১ হাজার ৬৫০টি জেনেরিকের ২৫ হাজার, ৩০ হাজার প্রোডাক্ট চালু আছে। এর মধ্যে ১১৭টি জেনেরিকের ৪৬০টি ওষুধের দাম ওষুধ প্রশাসন নির্ধারণ করে। অন্যগুলো কোম্পানি খরচ হিসাব করে একটি দাম প্রস্তাব করে। আমরা ভ্যাট সংযোজন করে দাম সমন্বয় করে দেই। ওষুধ শিল্প সমিতির দাম বাড়ানোর প্রাথমিক আলোচনা শুনেছি। কিন্তু তারা এখনো আমাদের কাছে এধরনের কোনো আবেদন করেনি। তারা আবেদন করলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ভোক্তা এবং প্রতিষ্ঠান সবার স্বার্থ বিবেচনা করে নিয়মানুযায়ী যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করবে।’ দেশে জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে; বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ, এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো ওই সব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। গত দুই বছরে নানা অজুহাতে প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম কয়েক দফা বাড়ানোর পর আবার শুরু হয়েছে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে ২০২২ সালে দুই দফায় প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধসহ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের দাম ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত বছরের মে মাসে দেশের শীর্ষস্থানীয় ছয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি ২৩৪টি জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এর কোনো প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেনি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেক্সোফেনাডিন প্রতি পিস ৮ টাকা থেকে ৯ টাকা হয়েছে। অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতি পিস ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। মন্টিলুকাস্ট প্রতি পিস ১৬ টাকা থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। ভিটামিন বি১ বি৬ বি১২ এর প্রতি পিসের দাম ৭ টাকা থেকে দুই ধাপে দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা হয়েছে। ইসমিপ্রাজলের প্রতি পিসের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা হয়েছে। লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিসের দাম ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা করা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রামের ১০ পিস ওষুধের দাম ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল ৬৬৫ মিলিগ্রাম ১০ পিস ওষুধের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। প্যারাসিটামল সিরাপের দাম হয়েছে ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। অ্যামলোডিপাইন অ্যাটিনোলাল ৫ মিলিগ্রামের দাম ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা হয়েছে। ব্রোমাজিপাম ৩ মিলিগ্রামের দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা হয়েছে। ১০ পিস কিনতে আগে ৫০ টাকা লাগত এখন থেকে ৭০ টাকা। অ্যাসপিরিন ৭৫ মিলিগ্রামের দাম এক পাতায় ১০ পিসের দাম পড়ত ৫ টাকা এখন ৮ টাকা। ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ের অর্ধেকই খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে। আর এ টাকার ৯৩ ভাগ যাচ্ছে রোগীর পকেট থেকে। ওষুধের পেছনে বছরে গড় খরচ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ছয় ভাগ বিনামূল্যে পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে। সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।
0 Comments
Your Comment