চিকিৎসাসেবা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে হাসপাতালে তিন শিশুর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজ। সিন্ডিকেটে জিম্মি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষ ব্যথিত হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করছে। আমাদের জমানায় ছোটবেলায় সুন্নতে খতনার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। হাজাম আসতেন বাড়িতে। বসাতেন পিঁড়িতে। চোখে কাপড় বেঁধে দিতেন। তারপর বাঁশের ওপরের পাতলা করে কেটে নেওয়া ধারালো অংশ দিয়ে খতনার কাজ শেষ করতেন। রক্ত বন্ধের জন্য এক ধরনের পাউডার মনে হয় সাদা কাপড় পোড়া ছাই দিয়ে ব্যান্ডেজ হতো। কী মেডিসিন ব্যবহার হতো জানি না। সাত দিন ব্যথা থাকত। অষ্টম দিনে ব্যান্ডেজ খোলা হতো। ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকত। অনেক পরিবার খাসি জবাই দিত। কোনো শিশু মারা গেছে শুনতাম না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের আধুনিক যুগে হাজাম পেশা বিলুপ্ত। ২৩ বছর আগে আমার ছেলের খতনা করিয়েছিলাম ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী খতনা চালু করেছিলেন গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে। নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে খতনার কাজ শেষ করলাম। ঘণ্টাখানেক পর ছেলেকে নিয়ে ফিরলাম বাসায়। কোনো সমস্যা হয়নি। ঢাকার নামিদামি হাসপাতালে এখন খতনা হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে। আমরা চিন্তিত হচ্ছি হাসপাতালে সঠিকভাবে খতনা করানো নিয়ে। নামিদামি হাসপাতালে খতনার সময় শিশুমৃত্যু নিয়ে। এসব হাসপাতালে প্রবেশের সময় শিশু বাবা-মায়ের উৎকণ্ঠা দেখে বিস্মিত হয়। সর্বশেষ রাজধানীর এক হাসপাতালে খতনার সময় শিশু ঝুঁকিমুক্ত ছিল কি না কেউ জানে না। সেদিন একজন অভিভাবক শিশুকে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। ভয়ে ভয়ে ছিলেন। কিছুদিন আগে ইউনাইটেডে এক শিশু খতনা করানোর সময় মারা গিয়েছিল। এই অভিভাবকের উৎকণ্ঠা দেখে শিশুটি বলেছিল, ভয় পেয়ো না। আমি সাহসী আছি। সেই সাহসী শিশু আর ফেরেনি বাবা-মায়ের কোলে। খতনা করাতে গিয়ে চিকিৎসকের ভুলে মারা যায়। ভুল এখন অ্যানেসথেসিয়ার না চিকিৎসকের, তদন্তে বেরিয়ে আসবে। কথা হলো তদন্ত রিপোর্ট আদৌ বের হবে কি না কেউ জানে না। বড় অদ্ভুত একটা সময় পার করছি। যে দেশের হাসপাতাল সুন্নতে খতনা করতে পারে না সে দেশের চিকিৎসা খাতের অবস্থা কতটা ভয়াবহ সহজেই বোঝা যায়। মানুষ অসহায়। তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। সামর্থ্যবানেরা চিকিৎসার জন্য যান ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর। মধ্যবিত্ত ভারতে। দেশের ডলার চিকিৎসার পেছনে বিদেশে যায়। চাপে পড়ে অর্থনীতি। কঠিন বাস্তবতার ভিতরে বাস আমাদের। গরিবের কেউ নেই। কিছু নেই। তাদের ভরসা সরকারি হাসপাতাল। সেখানে রুটিন ধরে চিকিৎসক রোগী দেখেন। সরকারি ছুটির দিন কেউ হাসপাতালে যান না। ঈদ-চান্দের অসিলা হলে কথাই নেই। রোগীদের আর্তনাদ কারও কানে যায় না। জেলা-উপজেলায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা থাকতে নারাজ। সবাই চান ঢাকায় বদলি হতে। বেসরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসার আশায় সবাই ছুটে যায়। চিকিৎসক যত দেখবেন তত টাকা দিতে হয়। পরীক্ষানিরীক্ষার শেষ নেই। যত পরীক্ষা তত কমিশন। ছুটির দিনে আলাদা পয়সা দিতে হয় চিকিৎসককে। নামিদামি হাসপাতালের ব্র্যান্ডিংয়ে ব্যবসা। উন্নত বেসরকারি হাসপাতালের নামে ব্যবসা ছাড়া কিছুই হয় না। স্বাস্থ্য খাতের অরাজকতা সহ্য করার মতো নয়। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ অব্যবস্থাপনা পেয়েছেন উত্তরাধিকারসূত্রে। ভালো দিক, দায়িত্ব নিয়ে শুরু থেকেই তিনি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। চেষ্টা করছেন সংকট কাটাতে। কতটা পারবেন সিন্ডিকেট হটাতে জানি না। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য খাতে আর কোনো সিন্ডিকেট দেখতে চায় না। মিঠুসহ সব সিন্ডিকেট চিরতরে কালো তালিকায় আসুক। চিকিৎসা খাতে মানুষের জীবন নিয়ে যা খুশি করার সুযোগ নেই। কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে। অপ্রয়োজনীয় চায়নিজ ইকুইপমেন্ট কিনে জার্মানির সিল মেরে জমাদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। যারা ইকুইপমেন্ট কিনে হাসপাতালে ফেলে রাখেন তাদের চাকরিচ্যুত করুন। মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলেন এমন চোরদের দরকার নেই।
0 Comments
Your Comment