চাঁদা দিন টোকেন নিন

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় স্টিকার লাগিয়ে চাঁদা ওঠায় একটি চক্র। ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ লেখা এই স্টিকারের আড়ালে প্রতি বৈধ সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসে ২ হাজার টাকা ও অবৈধ অটোরিকশা থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে চক্রটি। এ সড়কে চলাচল করা ৭/৮ হাজার অটোরিকশা থেকে চক্রটি মাসে ২ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে। কেউ টাকা না দিলে মারধরসহ অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে গাড়ি ডাম্পিং করে চক্রটি। ভুক্তভোগী এক চালক বলেন, ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর বুড়িগঙ্গা সেতুর টোল বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় সেতুর ইজারাদার ছিলেন আলম ওরফে দিগম্বর আলম। টোল বন্ধ হওয়ার পরই আক্তার, ফয়সাল ও বাবু মহাজন চক্রটি স্টিকার লাগিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে। তারা মাসের প্রথম সপ্তাহেই অগ্রিম টাকা দিয়ে স্টিকার দেন চালকদের। চাঁদা না দিলে চালকদের মারধর করে। একই সঙ্গে পুলিশের মাধ্যমে গাড়ি ডাম্পিং করে। পরে টাকা দিয়ে স্টিকার লাগিয়ে গাড়ি ডাম্পিং থেকে বের করে আনতে হয়। তাদের এক কথা- এ সড়কে গাড়ি চালাতে হলে টাকা দিতে হবে, স্টিকার নিতে হবে। একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর ভাসানটেক এলাকায়। ভাসানটেক বাজারের মোড় ব্যবহার করে মিরপুর-১৪ নম্বর, মাটিকাটা এবং দেওয়ানপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে ১০০-এর মতো এবং প্রায় ১৫০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এ ছাড়া টেম্পোর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। ব্যাটারিচালিত রিকশার কাছ থেকে প্রতিদিন নেওয়া হয় ৫০ টাকা। আর যারা মাসিক হারে টাকা দেন তাদের রিকশার পেছনের সিটের ওপর ছোট করে সিল এবং স্বাক্ষর দেওয়া থাকে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কাছ থেকে নেওয়া হয় ২২০ টাকা করে। আগে ছিল তা ২০০ টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাছে প্রতি ট্রিপে নেওয়া হয় ২০ টাকা করে। একই চিত্র মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, পল্লবী, বাড্ডা, রামপুরা, ডেমরা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এবং যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে পাওয়া গেছে। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে পরিবহনে ভয়াবহ চাঁদাবাজি চলছে। বাস, ট্রাক, থ্রি হুইলারসহ বৈধ ও অবৈধ সব পরিবহনই চাঁদাবাজ চক্রে জিম্মি। প্রতিদিন, সাপ্তাহিক, মাসিক হারে টোকেন বাণিজ্য করছে চাঁদাবাজ চক্রটি। চাঁদাবাজ এই চক্রটি এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় ঢুকতে এবং বের হতে, টার্মিনালে, টার্মিনাল থেকে বের হতে, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে, ট্রাক স্ট্যান্ডে, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনে নির্দিষ্ট হারে, কাগজ থাকলেও এবং না থাকলেও নির্দিষ্ট হারে চাঁদা গুনে নিতে হয় সড়কে চলার অনুমতি। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা শহরে কাগজপত্র ও লাইসেন্সবিহীন শত শত গাড়ি থেকে তোলা হয় চাঁদা। একই সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদা, পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়সহ বাস, ট্রাক, টেম্পো, সিএনজি ও অটোরিকশাসহ সব পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। দেশে চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় সেক্টর এখন পরিবহন খাত। প্রতি মাসে এই খাত থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রটি। আর এই চাঁদাবাজি চক্রে রাজনৈতিক দলের উঠতি নেতা থেকে পাতি নেতাও জড়িত। এক কথায় সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি পরিবহন খাত। প্রকাশ্যে এসব চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন অনেকটা নির্বিকার। নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। পণ্যবাহী যানবাহনে বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে প্রভাব পড়ছে খাদ্যপণ্যের খুচরা মূল্যে। পরিবহন খাতের মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি স্ট্যান্ড ঘিরে রয়েছে শ্রমিক সমিতি কিংবা মালিক সমিতির নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন। আর ওই সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে থাকছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালীরা। এদের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট। আবার প্রতিটি স্ট্যান্ডেই রয়েছে ওই সিন্ডিকেটের নিয়োগপ্রাপ্ত লাইনম্যান। সিএনজি, অটোরিকশা, বাস কিংবা ট্রাক থেকে ওই লাইনম্যানের হাতেই নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদার টাকা আদায় হচ্ছে প্রতিদিন।

0 Comments

Your Comment

Subscribe For

Weekly Newsletter

Subscribe to stay up-to-date on all the latest news