সেই সুরত মিয়ার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? যারা ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে বসবাস করছেন তাদের সুরত মিয়ার কথা ভোলার নয়! ১৯৯৬ সালের ৯ মে ঢাকা বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিকিউরিটি জোনের ভিতরে কাস্টমস কর্মকর্তারা মিলে পিটিয়ে হত্যা করেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি সুরত মিয়াকে। ২৮ বছরেও এ হত্যার বিচার হয়নি! এখন কেউ জানেই না এ হত্যা মামলার কোনো তথ্য! ১৯৯৬ সালের ৯ মে। ব্রিটেনের নিউ ক্যাসলের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ব্রিটিশ বাংলাদেশি সুরত মিয়া (৩৫) কেএলএমের একটি ফ্লাইটে ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন। সেখানে কাস্টমস লাউঞ্জে দায়িত্বরত কাস্টমস কর্তকর্তারা তার কাছে ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এর প্রতিবাদ করেন সুরত মিয়া। এক পর্যায়ে কাস্টমস কর্তকর্তারা মিলে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ওই দিনই তিনি মারা যান। সুরত মিয়া সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুরের বাসিন্দা ছিলেন। সেই সময় সুরত মিয়ার হত্যা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করে সাপ্তাহিক জনমত। পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক নবাব উদ্দিন বলেন, তরুণ ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সুরত মিয়া যখন ঢাকা এয়ারপোর্টে নামেন তখন তার সঙ্গে থাকা ৪ হাজার পাউন্ডের দিকে নজর যায় এক নারী কাস্টমস কর্মকর্তার। সেই মহিলা সুরত মিয়ার কাছে ঘুষ দাবি করেন। তখন সুরত মিয়া চ্যালেঞ্জ করেন। সেখানে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে কাস্টমসের অন্য কর্মকর্তারা মিলে হামলা করেন সুরত মিয়ার ওপর। এক পর্যায়ে কাঠের একটি টুকরো দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সুরত মিয়া। তারপর কাস্টমস কর্মকর্তারা মিলে প্রথমে চিন্তা করেন তার লাশ বাইরে ফেলে দেবেন। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। তারপর সুরত মিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয় তাকে। অপবাদ তোলা হয় সুরত মিয়া মদ্যপ ছিলেন। নির্মম এ হত্যাকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা সুরত মিয়ার হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন পর সেই আন্দোলনও থেমে যায়। সেই সময় যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী। তিনি বলেন, তখন ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আন্দোলনে নামেন, তখন ক্ষমতার পট পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয় এর সুষ্ঠু বিচার হবে। আমরা সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসি। পরবর্তীতে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বিচার চাই। ব্রিটেন থেকে কমিউনিটি নির্বাচন করে একটি তদন্ত কমিটি করে পাঠানো হয় দেশে। সেই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য এনে উপস্থাপন করে। দুঃখের বিষয় হলো কোনো কিছুই কাজে লাগেনি। নবাব উদ্দিন বলেন, কয়েক মাস পর সুরত মিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যায়। সুরত মিয়া হত্যার ২৭ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের বিচার পায়নি তার পরিবার। তাদের পরিবার এখনো নিউক্যাসলে থাকে। তবে তারা বিচারের প্রত্যাশা করলেও মিডিয়ায় কথা বলতে ইচ্ছুক নয়!
0 Comments
Your Comment