দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর খুলনা আওয়ামী লীগে চলছে অস্থিরতা। কটূক্তি আর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ফলে এ অবস্থা। রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই খুলনা-৪ আসন এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোর্ত্তজা রশিদী দারার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। নৌকার প্রার্থী আবদুস সালাম মুর্শেদী নির্বাচনে জেতার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ‘মীরজাফর’ আখ্যায়িত করার অভিযোগ উঠেছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর ওপর হামলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ও চাকরিচ্যুতির অভিযোগ তোলেন রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন বাদশা। অন্যদিকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কামাল উদ্দিন বাদশাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক ফ ম আবদুস সালাম। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। একইভাবে সংসদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে খুলনা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। নির্বাচন চলাকালে নানা ইস্যুতে নৌকার প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও স্থানীয় দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে দূরত্ব কমেনি। জানা যায়, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুলনায় গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। একাধিক সিনিয়র নেতা প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। এবারও উপজেলা নির্বাচনের আগমুহূর্তে দলীয় বিভেদ মাথা চাড়া দিয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, খুলনায় নয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দূরত্ব বাড়ছে। নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ও চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামালউদ্দিন বাদশা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের সুযোগ দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারাভিযানে নির্বাচন প্রাণবন্ত হয়; জনগণ পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেয়। কিন্তু ওই নির্বাচন কেন্দ্র করে খুলনা-৪ আসনে বিভক্তির রাজনীতি শুরু হয়েছে। নির্বাচিত সংসদ সদস্য দলের যেসব নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন তাদের পদপদবি বাতিলের হুমকি দিচ্ছেন। ক্ষমতাবহির্ভূত আইচগাতি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বভার বদল করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী গণভবনে স্বতন্ত্র নির্বাচিত প্রার্থী ও দলীয় বর্ধিত সভায় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিলেও খুলনা-৪ আসনে পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হচ্ছে।
0 Comments
Your Comment