ছোট হয়ে আসছে এরশাদের জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিরোধীদলীয় উপনেতা ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু চিফ হুইপ নির্বাচিত হওয়ায় ৩ ফেব্রুয়ারি দলীয়ভাবে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। দলের বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টি আয়েজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি হলেন পার্টির চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরীফা কাদের। একই দিনে একই সময়ে একই সংগঠন রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির ছাত্র সমাজের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নয়জন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তারা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের দায়িত্ব পালন করেন। তারা এখন রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। নেতা-কর্মীরা বলছেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল অব্যাহতি থেকে কেউ বাদ পড়ছে না। জি এম কাদেরের দেওয়া অব্যাহতির তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আর অব্যাহতিপ্রাপ্তরা বলছেন, তারাই এখন পার্টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। এভাবেই ছোট হয়ে আসছে প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠা করা জাতীয় পার্টি। জানা যায়, সরকারের সঙ্গে ২৬ আসনে নির্বাচনি সমঝোতাকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি সারা দেশে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় প্রার্থীদের কোনো রকম খোঁজ না নেওয়া, আর্থিক সহযোগিতা না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বনানী কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা। গণ আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে ভাঙনের মুখে পড়ে জাতীয় পার্টি। এ পর্যন্ত ছয় দফা ভাঙনে পাঁচ খণ্ড হয়েছে দলটি। এর মধ্যে চারটিই নিবন্ধিত। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরও এর ব্যতিক্রম ঘটাতে পারেনি দলটি। গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আনেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এবার জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে বেশকিছু হেভিওয়েট নেতা রওশন এরশাদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিলে বিভক্ত হয়ে পড়ে দলের তৃণমূলও। বিশেষ করে জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, কো- চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সুনীল শুভ রায়সহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা অনিয়মের অভিযোগ আনেন। ২ ফেব্রুয়ারি জাপার কাকরাইল কার্যালয়ে রওশন এরশাদ অনুসারীরা প্রবেশ করলে জি এম কাদের কাকরাইল কার্যালয় নিজস্ব কবজায় রাখতে নেতা-কর্মীদের নিয়মিত কার্যালয়মুখী হতে নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও আগের মতো পার্টি অফিসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন তিনি। জাপা বনানী সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর অন্তত ৩০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কয়েকজন সিনিয়র নেতা ছাড়া অন্য কাউকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দল থেকে পাঠানো হয়নি কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি। তবে, জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতাদের নাম ফেলে দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি থেকে রক্ষা পাননি সাবেকমন্ত্রী, সাবেক এমপি, প্রয়াত এরশাদের ঘনিষ্ঠজন, দলের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় যুব সংহতি, ছাত্র সমাজ, জাতীয় শ্রমিক পার্টি এবং মহিলা পার্টির সাবেক শীর্ষ নেতারাও।

0 Comments

Your Comment

Subscribe For

Weekly Newsletter

Subscribe to stay up-to-date on all the latest news