রাজধানীতে গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে সংঘর্ষ কেন্দ্র করে আটক একের পর এক নেতার মুক্তিতে চাঙা হচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আন্দোলন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে নেতাদের মুক্তিতে এখন দল গোছাতে মাঠে নামছে বিএনপি। তবে এখনই কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না রাজপথের প্রধান এই বিরোধী দলটি। আপাতত ঘরোয়া কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকবে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের চেয়ারম্যান বা নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন যোগ্য কাউকে শূন্য পদে অধিষ্ঠিত করবেন সেটা করতেই পারেন। জানা যায়, প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় নেতা-কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ সব কমিটি পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এজন্য যেসব জেলা ও দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি সেখানে নেতা-কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যেসব সংগঠনে দীর্ঘদিন কাউন্সিল হচ্ছে না, সেসব জায়গায় সম্মেলন হবে। দলটির নেতারা বলছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়া এবং নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে আন্দোলনে রাজপথে থাকা সক্রিয় নেতাদের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্বে সংগঠন সাজানো হবে। বিগত বছরগুলোতে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে হয়েছেন নিঃস্ব। আবারও জেল-জুলুম সহ্য করতে রাজপথের আন্দোলনে ছিলেন সরব। সেসব নেতাকে মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন শূন্য পদে তাদের অধিষ্ঠিত করা হবে। বিএনপির দফতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, যারা পদ পেয়েও বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। কোনো বিভাগ বা জেলায় কতজন জেল খেটেছেন, তার তালিকা করা হচ্ছে। এদিকে দলের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা খুশি হলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে দলের দায়িত্বশীল কিছু নেতাদের মধ্যে। জানা গেছে, ছাত্রদল-যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, তাঁতী দল, জাসাসের কমিটি এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি। তবে শ্রমিক দলের সম্মেলন হয় না দীর্ঘ বছর। আর অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া হয়েছে ওলামা দলের কমিটি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি দীর্ঘদিন চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। আন্দোলনে এসব সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষনেতার রাজপথে পারফরম্যান্স নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিএনপির জাতীয় সম্মেলনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও আপাতত দলটির কাউন্সিলের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ব্যাপক রদবদলের পরিকল্পনা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে সক্রিয়দের আনা হচ্ছে। শূন্য পদেও আসছে নতুন নেতৃত্ব। মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোও ভেঙেচুরে রাজপথে সক্রিয়, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য নেতাদের এনে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানোর পরিকল্পনা চলছে। শীর্ষ নেতাদের মুক্তি : বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যেসব শীর্ষ নেতা সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মোনায়েম মুন্না, গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান রুয়েল, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ডা. রাকিবুল ইসলাম আকাশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান। এ ছাড়া জামিন পেয়ে মুক্তির অপেক্ষায় আছেন অনেকেই। এতে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে।
0 Comments
Your Comment