বিএনপি জোটের বেহাল দশা

বেহাল অবস্থায় পড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কার্যক্রম নেই। তারা মাঝেমধ্যে নামমাত্র দু-একটা কর্মসূচি দিলেও সেগুলোও হচ্ছে আলাদাভাবে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সমমনা দলগুলো যুগপৎ একই কর্মসূচি পালন করলেও এখন শরিকরা যার যার মতো করে একেক ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে। রাজপথে নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অবমূল্যায়ন, অবহেলা ও অবমাননা আর দলটির ‘একলা চলো নীতি’তে বছর দেড়েক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে ২০ দলীয় জোট। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর অনেকটাই ক্ষোভ আর হতাশা ভর করেছে সমমনা দল ও জোটগুলোর ওপর। নতুন করে আন্দোলনের কর্মকৌশল নিয়ে কথা বলার মতো নেতা বিএনপিতে খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। বিএনপি হাইকমান্ড তারেক রহমান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা কারাগারে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেওয়ার কেউ নেই। ফলে সমমনা দলগুলোর নেতারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তাদের প্রত্যাশা ধীরে ধীরে সবকিছুই আবারও ঠিক হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে কী হয়েছে, সারা দেশের মানুষসহ সারা বিশ্ব দেখেছে। নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। জানা যায়, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে মাঠে আছে কমপক্ষে ৪০টি রাজনৈতিক দল। এতে রয়েছে আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের পৃৃথক গণ অধিকার পরিষদ, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি, রফিকুল ইসলামের ভাসানী অনুসারী পরিষদ এবং হাসনাত কাউয়ূমের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), খন্দকার লুৎফর রহমান ও এস এম শাহাদাত হোসেনের জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), মো. আকবর হোসেনের ডেমোক্রেটিক লীগ, গরিবে নেওয়াজ ও সৈয়দ মাহবুব হোসেনের পিপলস লীগ, আবদুর রকিব ও আবদুল করিমের ইসলামী ঐক্যজোট, এম এন শাওন সাদেকী ও দিলীপ কুমার দাসের বাংলাদেশ ন্যাপ, নুরুল আমিন ব্যাপারী ও শাহ আহমেদ বাদলের বিকল্পধারা বাংলাদেশ, নূরুল ইসলামের সাম্যবাদী দল, এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী ও আবু সৈয়দের গণদল, আজহারুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা আকন্দের ন্যাপ ভাসানী এবং সুকৃতি মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, মোস্তফা জামাল হায়দারের জাতীয় পার্টি (জাফর), আবদুল করিম আব্বাস ও শাহাদাত হোসেন সেলিমের বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের এনডিপি, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের ইসলামী ঐক্যজোট, তাসমিয়া প্রধানের জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নুরুল ইসলামের বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল এবং আবুল কাসেমের বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টিসহ আরও অনেক দল। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয়েছে আবুল কালাম আজাদের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, শামসুল আলমের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও হারুন আল রশিদের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল নিয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য’ এবং মোস্তফা মোহসীন মন্টুর ‘গণফোরাম’। কিন্তু নাম এবং সাইন বোর্ডসর্বস্ব এসব দলের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয়েছে, তাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কারও নাম-ধাম-পরিচয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তেমন শোনা যায় না। কতগুলো দল আছে, যাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা জোট নেতারাই চেনেন না।

0 Comments

Your Comment

Subscribe For

Weekly Newsletter

Subscribe to stay up-to-date on all the latest news